Wednesday, April 20, 2016
ঝিনাইদহে হরণিাকুন্ডুর নারায়নকান্দি সৌদি খেজুরের গ্রাম
হরিণাকুন্ডুর নারায়নকান্দি এখন জেলাবাসির কাছে সৌদি খেজুরের গ্রাম বলে
পরিচিত। বানিজ্যিক ভাবে খেজুর উৎপাদন না হলেও মাঠের পর মাঠ বালুময় জমিতে
সৌদি খেজুরের গাছ শোভা পাচ্ছে। গত দুই বছর ধরে গাছে ফুল আসলেও কৃষকদের
অনভিজ্ঞতা আর পরিচর্চার অভাবে চুরমি ঝরে যাচ্ছে। ঝিনাইদহ বনবিভাগ সুত্রে
জানা গেছে, ২০০০ সালে সরকারের জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় জেলার
হরিণাকুন্ডু উপজেলার নারায়নকান্দি গ্রামে সৌদি খেজুরের চারা রোপন করা
হয়।সদর উপজেলার মীর্জাপুর ও কুলবাড়িয়া গ্রামের মাঠেও এই প্রকল্পের আওতায়
সৌদি খেজুরের চারা রোপন করা হয়। সরকারী ভাবে দুই বছর পরিচর্চা শেষে কৃষকদের
কাছে খেজুর বাগান হস্তান্তর করে বন বিভাগ। প্রকল্পকালীন সময়ে দায়িত্বরত
ঝিনাইদহ জেলা ফরেস্ট অফিসার গিয়াস উদ্দীন মুকুল জানান, ঝিনাইদহ বনবিভাগের
কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় জেলার পরিত্যক্ত ও বালু জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে
সৌদি খেজুরের চারা রোপণ করে ভাল ফল পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা ও
হরিণাকুন্ডু এলাকার পরিত্যাক্ত জমিতে তিন লাখেরও বেশি সৌদি ও দেশি খেজুরের
চারা রোপণ করা হয়। এর মধ্যে হরিণাকুন্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের
নারায়ণকান্দী গ্রামের বেলের মাঠে সব থেকে বড় সৌদি খেজুরের বাগান করা হয়েছে।
গিয়াস উদ্দীন মুকুল আরো জানান, নারায়ণকান্দি গ্রামের দবির উদ্দীন, আব্দুল
লতিফ, আব্দুল বারী, আবু বিন আদম, কাজী খায়রুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, মজিবর
বিশ্বাস, মুক্তার আলী বিশ্বাস, আব্দুর রশিদ, কাজী রবিউল ইসলাম, মোশাররফ
হোসেন ও আমির আলীসহ এলাকার ৪৮ জন কৃষকের ৫০ বিঘা জমিতে সৌদি খেজুরের বাগান
করা হয়। সৌদি খেজুরের সবচে বড় বাগানের মালিক নারায়নকান্দি গ্রামের দবির
উদ্দীন জানান, গাছ রোপনের তের বছর পর ২০১৪ সালে গাছে চুরমি (স্থানীয় ভাষায়
চোমর বলে) আসে। ওই বছর কিছু বুঝে ওঠার আগেই চুরমিগুলো ঝরে যায়। তিনি আরো
জানান, এ বছর ৭০/৮০টি গ্রামে চুরমি আসলেও মাত্র দুইটি গাছে খেজুর ধরেছে।
তিনি শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত সেচ দিয়ে খেজুর গাছগুলো তরতাজা করে তুলেছেন বলেও
জানান। তাবে দবিরের মতো নারায়নকান্দি গ্রামের আর কোন কৃষক সৌদি খেজুর
বাগানের পরির্চাচা করেন না বলে জানা গেছে। একই গ্রামের আব্দুস সালাম অভিযোগ
করেন, গ্রামের কিছু অসাধু মানুষ সৌদি খেজুর গাছের পাতা কেটে নিয়ে যায়। এ
জন্য কিছু বাগান দুর্বল হয়ে গেছে। এদিকে মাত্র একটি গাছে খেজুর আসা নিয়ে
গোটা নারায়নকান্দি গ্রাম এখন উচ্ছাসিত। সুদুর সৌদি আরবের খেজুর এখন তাদের
নাগালে বলেও মনে করেন নারায়নকান্দি গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান।
এদিকে চৌদ্দ বছরের বেশি সময় পার হলেও পরিচর্চা আর যতেœ অভাবে খেজুর ধরছে না
বলে মনে করেন কৃষিবিদরা। তাদের ভাষ্য বাগান মালিকরা সচেতন আর ব্যবসায়ীক
স্বার্থ বুঝলে এক সময় খেজুরের বানিজ্যিক চাষ হবে নারায়নকান্দি গ্রাম থেকে।
সৌদি আরবে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ না করা হলেও বাংলাদেশে রোপিত গাছ থেকে
খেজুরের পাশাপাশি রস ও গুড় উৎপাদন করা যাবে বলে বনবিভাগের কর্মকর্তারা
জানান। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের
সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি একাধিকবার হরিণাকুন্ডু
উপজেলার নারায়নকান্দি গ্রামের সৌদি খেজুরের বাগান পরিদর্শন করেছেন। তিনি
বলেন যতেœর অভাবে খেজুর গাছগুলোতে বিলম্বে ফল আসছে। যতœ ও পরিচর্চায় এক সময়
নারায়নকান্দি গ্রামে সোনা ফলবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। খেজুর গাছের যতেœ
কৃষকদের এখন কি কি করণীয় সে সম্পর্কে তাদের টিপস দিয়েছেন বলে জানান।
ঝিনাইদহের কৃষিবিদ ড. মনিরুজ্জামান জানান, সৌদি খেজুর গাছের পরাগায়ন পোকা
মাকড়, মৌমাছি বা বাতাসের মাধ্যমে খুব কম হয়ে থাকে। হাত দিয়ে বা মেকানিক্যাল
পদ্ধতিতে পরাগায়ন করতে হয়, যা হয়তো নারায়নকান্দির বাগান মালিকরা জানেন না।
তিনি বলেন, বাগানে একশ স্ত্রী গাছের সঙ্গে মাত্র একটি পুরুষ গাছের
পরাগরেনু পাউডার দিয়ে স্ত্রী গাছের পুস্পমঞ্জুরীতে ২/৩ বার লাগিয়ে পরাগায়ন
করা যায়। পুরুষ গাছের পাউডার ফ্রিজে ২/৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষন করে ব্যবহার
করা যায়। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা বণ কর্মকর্তা অনিতা মন্ডল জানান, তারা
বাগান মালিকদের চাষ ও যতœ করার বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন নিয়মিত পরিচর্চা
করলে তারা ভাল ফল পেতে পারেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment